রূপকথা বলে যে মেয়েটি আমার
সঙ্গে ইস্কুলে পড়েছে, সে আমার মেয়ের সঙ্গেও ভাব করবে মনে হচ্ছে। তার হাত ধরে আমি
বাড়ি থেকে পালাব ঠিক করেছি অনেকবার।
মিশন পাড়ার মাঠ পেরিয়ে যে অজানা প্রান্তরে ধান চাষ হত,
সেখানে তেপান্তরের মাঠ। সেখানে মিহি চাঁদের আলোয় পক্ষীরাজ ঘোড়া ছুটিয়ে আসত নীলকমল
আর লালকমল- দুই ভাই। তাদের আমি চোখে দেখি নি। তবু আজও নিশ্চিত জানি, ওই মাঠেই পরীর
দল ডানা ভেজাতে আসে এখনও। পরী- এই আর এক বন্ধু আমাদের ছিল। রূপকথার বাড়ির এক ঘরে ও
কুয়াশা মেখে ঘুমাতে যেত। পরী যে শুধু ভিক্টোরিয়ার মাথায় ঊড়বে
বলে আটকে গেছে - সে বৃতান্ত জানা ছিল না সে কালে। তখন পরী নামতো ঘুম এলেই।
সে সময়ে পরী-দেখা লোকেদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেত প্রায়ই।
রূপকথার সঙ্গে খাতির চটে গেছে বহুকাল। রূপকথার সঙ্গে
দেখাও হয় না কতদিন হল !
ঘুম আসে না রাতে। ভোররাতে যারা ঘুমায় তাদের সঙ্গে আড়ি
রূপকথাদের।
যারা আসলে বড় হয়, তাদের জন্য এল ডোরাডোর রাস্তা বন্ধ।
পরীদের পাড়ায় তাদের ' নো এন্ট্রি'। মহালয়ার আগের রাতে যাদের বাড়ীতে রেডিও খুঁজে
পাওয়া যায় না, তাদের দয়া করে না কোন রাজপুত্রই। যারা গুঁড়ো দুধ চেটে খেতে ভুলে
গেছে, তাদের ঘরে রূশদেশের উপকথা মানায় না - আর যাই হোক!
রূপকথা এখন তাদের বাড়ি যায়, যারা পয়লা বৈশাখে হাওয়াই
মিঠাই খাবে বলে ঠাম্মার
কাছে বায়না করে।
রূপকথার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে যায় খুব। এই সব উড়োজাহাজের
দিনকাল - এই সব ডুবো জাহাজের ওঠানামা - এই সব বোমারু বিমানের আনাগোনার দিনে রূপকথা
খুঁজি আনাচে কানাচে।
রূপকথা স্পর্শকাতর ভারি। সে আমাকে চায় না - জানিয়ে দেয়
নানা ভাবে। জানিয়ে দেয় ঘুমায় না যারা, তাদের তার খুব অপছন্দ। জানিয়ে দেয় অস্ত্র
তাকে অসহায় করে বরাবর। জানিয়ে দেয় কড়া রোদ্দুরে পুড়ে যাওয়া তার পোষাবে না একেবারে।
জানিয়ে দেয় জঙ্গীপনার ভাষা সে বোঝে নি কোনদিন।
আমি আলমারির গায়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি মাঝে মাঝে। ছায়া
মাখা দিনে , যেদিন মা আসে - ঘুম পায় খুব। অনায়াস মেঘ করে। পিয়ানো বাজে পাশের বাড়ি।
জন্মদিনে রেডিও কিনে আনি। ইস্কুল
থেকে ফিরে ফুলগাছ বই খুলে বসে।
আমার ঘুম আসি আসি করে - রূপকথা ঘুমালে নামবে জানিয়েছে।
No comments:
Post a Comment