এডগ্যার এলান পো,যিনি
কিনা,ব্যদলেয়েরের আগেই একটি নতুন কাব্যাদর্শের সন্ধান করছিলেন,তাঁর নিজের
কাব্যভাবনাটি কীরকম ছিল?সাহিত্যের মোটাদাগ সমালোচনায় আমরা সহজেই বলে ফেলতে
পারি,তিনি রোমাণ্টিক কাব্যপ্রতীতির মধ্যে গ্রোটেস্ককে বপন করে দিলেন।এ এমন কিছু
নতুন ব্যাপার নয়।নতুন লাগে মাত্র,কারণ,রোমাণ্টিকতাকেও আমরা স্বরূপে বুঝতে খুব
অভ্যস্ত নই।রোমাণ্টিকতা একটা চিত্তবিস্ফারের অবস্থামাত্র।তার কিছু বৈশিষ্ট্য
আছে,যেগুলি তাকে ক্লাসিক শিল্প থেকে আলাদা করেছে।তা নয়তো,হয়তো চিত্তবিস্ফার বাদ
দিয়ে কবিতা লেখাই সম্ভব নয়,এরকমও কোনো আচার্য ভেবেছেন।
আমি যথাসম্ভব কম
জটিলতার মধ্য দিয়ে যদি বলি,তাহলে বলতে হয়,রোমাণ্টিক কবির যে ধরনের চিত্তবিস্ফার
ঘটে,তার মধ্যে যদি একটি অভ্যাস হয়,নিয়ত মঙ্গলময় অমিতায়ু শুভর মধ্যে বিলীয়মানতা,তবে
রোমাণ্টিক চিত্তবিস্ফারেরই আরেকটি ধরন হতে পারে,নিয়ত আত্মক্ষয়ের মধ্যে অমঙ্গলময়
শূন্যতার অঘোরপন্থা।বস্তুতপক্ষে এও বিব্লিকাল এবং পোলেমিকাল আলটিমেট।কীটসের
ধারাটিই এইরকম।
পো এই ভাবের কবি।ভারতীয়
দৃষ্টিতে তাকে বলব,শুদ্ধবীভৎস বা ভয়ংকর বা নির্বেদসঞ্চারিত শম এর নানা
বিন্যাস।ব্যদলেয়ের পোর থেকে এই উত্তরাধিকার পেয়ে কাজ চালিয়েছেন বললে,তাঁর জীবনকে
সীমিত করা হয়,য়ুরোপের দীর্ঘলালিত একটি প্রত্নপ্রতিমাগুচ্ছকে অস্বীকার করা হয় এবং
য়ুরোপের সমকালকেও ভুলবোঝা থাকে।ব্যদলেয়ের নিজের জীবনের স্বাভাবিক গতিতে এই দ্বিতীয়
দলের কবি।অভিজ্ঞ এবং উত্তরাধিকারী-দুইই।
বুদ্ধদেব,ব্যদলেয়েরের
এই ধরনকে স্পষ্ট অল্পকথায় চিহ্নিত করতে পেরেছেন কিনা জানিনা,এক আধবার বলেছেন
বটে,তিনি আবেগবর্জিত উপলব্ধিসার আধুনিক কবি।আধুনিকতার এই লক্ষণ, যদিচ এলিয়টসম্মত
বটে,তথাপি,রোম্যাণ্টিক বা প্রথমশ্রেণির রোম্যাণ্টিকরা আবেগিক মাত্র,এইজাতীয় একটা
সরলীকরণ,তাঁর ব্যদলেয়ের-ভূমিকার প্রথম দুর্বলতা।আবেগ কবিতার মেরুদণ্ড কিনা,আবেগ আর
উপলব্ধির কগনিটিভ ভেদ কী,আবেগ শুধু ইগো ও উপলব্ধি অধিশাস্তা কিনা,অধিশাস্তা কবিতা
লিখতে পারে কিনা,আসলে উপলব্ধি বলতে এলিয়টই গোড়াতে গলদ করেছেন কিনা,এসব তর্কে আর
যাচ্ছিনা।(শঙখ ঘোষ কিন্তু এলিয়টীয় কিছু সিদ্ধান্তকে অনেকদিন আগেই যথার্থ প্রশ্ন করেছিলেন।অন্তত
আবেগ ও প্রেরণা বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য।)
আবেগ একটা উন্মাদনাজাত
ক্রিয়া,কবিতা সেই ক্রিয়ারূপ হয়ে গেলে কবিতার সর্বনাশ হয়,কবিতার জন্য,আবেগের
অবস্থান যে ইগো,সেখান থেকে একটু একটু করে নির্জ্ঞানের দিকে নেমে আসতে হয়,এইটুকুই
মনোবিজ্ঞান-অনভিজ্ঞ এলিয়ট বলতে চেয়েও বুঝিয়ে বলতে পারেন নি,তা বুদ্ধদেব না বুঝেই
উঠতে পারেন,কিন্তু সুধীন্দ্রনাথ তা নিশ্চয় বুঝেছিলেন।যদি না বুঝতেন,তাহলে 'ঐতিহ্য
ও টি এস এলিয়ট ' প্রবন্ধে তিনি এলিয়টের এক্সটেন্সান ইয়ুং দিয়ে করতেন না।
বুদ্ধদেব নিরাবেগ
রোমাণ্টিকতার উত্তম ফল বলে,ব্যদলেয়েরকে চিহ্নিত করলেন।কী দেখে?কবিতার
ফর্ম,সংক্ষেপপ্রবণতা,কয়েকবার গ্রোটেস্কের চিত্রকল্প দেখে।তিনি বুঝলেন না,প্রতিটি
সৃষ্টির পশ্চাতের ইমপালস আবশ্যিক।মহৎকবি সেই ইমপালসকে যথার্থ ভাষা দিতে
দিতে,ইমপালসকে ক্ষয়িয়ে ফেলেন।কবিতা শেষ হয়।এখন আত্মক্ষয়ী ঐ দ্বিতীয় শ্রেণির বিশেষ
রোম্যাণ্টিক কবিদের ক্ষেত্রে,যা হয়,তা হল এই যে-বীভৎসের ইমপালস বা আবেগ সাধারণত
স্বভাবত ক্ষণকালীন হয়।কারণ মনোচিকিৎসাতত্ত্বের মতে,মানুষের মন যদি,চলে ফিরে খেয়ে
ঘুমিয়ে থাকতে চায়,তবে বীভৎসা,ভয়,নির্বেদের মধ্যে অধিকসময় নিজেই থাকতে পারেনা।সে
বেরোতে চায়।সেই ক্ষণজীবী নরকের সুন্দরতর কবিতা ব্যদলেয়েরের হতেই পারে,তার মানে এই
নয় যে,সেযুগেই এই দ্বিতীয় শ্রেণির কবিদের এই ভাবোন্মাদ দীর্ঘস্থায়ী মহৎ কবিতা দেবে
না।ব্যদলেয়েরের ভাঙনের চিত্রকল্পগুলি,আসলে বদ্ধ-আবেগের প্রলাপিত,ক্ষুদ্র অথচ
অলোকসামান্য সৃষ্টি নয়,তাইই বা বুদ্ধদেব কী করে বুঝলেন?'ভাব'উপচীয়মান না হলে,কবিতা
লেখা কীভাবে সম্ভব?তাহলে,স্পিনোজা কবি এবং গ্যথে দার্শনিক হলেন না কেন?মহাপ্রভু
কেন রঘুনাথ হলেন না,রঘুনাথ কেন মহাপ্রভু হলেন না?
এমনকী এই ইম্পালসিভ
ট্রান্স যে রোমাণ্টিকদের প্রথম দলের মতই দ্বিতীয়দলের পররোমাণ্টিকদেরও দীর্ঘ কবিতা
লিখিয়ে নিতে পারে,এলিয়ট নিজে তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।আমরা এই দ্বিতীয় ধরনের
হ্রস্ব/দীর্ঘ ভেদ নিয়ে এখনই বিস্তারে যাচ্ছিনা,কিন্তু বুদ্ধদেব ব্যদলেয়েরের একটি
চিত্রকল্পেরও ক্ষয়িষ্ণু অসংলগ্নতার মূল বিচার না করেই তাঁকে উত্তর-রোমাণ্টিক
আধুনিকতার একমাত্র বিগ্রহ বলে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলছেন।তা অংশত সত্য,কিন্তু হবালটার
বেঞ্জামিন যে অমোঘ বিশেষণে,ব্যদলেয়েরকে বিশ্লেষণী যুগের উচচতম "লিরিকাল
পোয়েট"বলেন,তা বুদ্ধদেব ধরেও ধরতে পারেন না।অথবা তিনি লিরিক বলতেই অদৃশ্য এক
মহাকবির বীণাবাদিনীর জালে ধরা পড়ে যান।সুরান্তর মানেই,যে সুরহীন নয়,সেই রসবোধ থেকে
বুদ্ধদেব স্খলিত হন।
অতঃপর
বুদ্ধদেব,আবেগ-নিরাবেগের মধ্যে দুলতে দুলতে, আবেগমন্দ্র উচ্চারণে,আধুনিকোত্তম এবং
নাকি ব্যদলেয়েরীয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন,আধুনিক কবির লক্ষণ উদ্দ্যেশ্যহীন
উৎকেন্দ্রিকতা।তাঁর ভূমিকা-প্রবন্ধের এই স্থানে এসে সচকিতে ভাবি,এমন কোন সে কবি
আছে,যে উৎকেন্দ্রিক নয়?
রবীন্দ্রনাথ
কেন্দ্রিক?তিনি তো কোন শৈশব থেকে ইস্কুল ছেড়ে,জাহাজ পালিয়ে,বিলেত ছেড়ে জীবনটাকে
অনির্দেশ্য করে ফেলেছিলেন।
ওয়ার্ডসওয়ার্থের প্রথম
জীবন?কীটস,শেলি,বায়রন,কে সে,কোন সে রোমাণ্টিক কবি যিনি পথ ছাড়েননি?কার জীবন,সহজ
আনন্দে কেটে গেল?কবি-নায়কদের জীবনে হাইপেরিয়ন রচিত হতে পারে,মনে হতে পারে কীটস
শুধু ঘাসের উপর আহ্লাদে লুটোপুটি খেতে খেতে দেবদূতের মত স্বর্গে চলে গেলেন,কিন্তু
আপনারাই কি মানতে প্রস্তুত আছেন,তা?
কবিতা মিথ্যে বলে
না,কবিতা সত্যও বলে না।কবিতা অনেকসময়েই বিপরীতকে বলে।রবীন্দ্রনাথকে মোহিনীমায়ার মত
প্রতারক বলেও,বুদ্ধদেব বিচারের সময় এ কী বললেন!
কেন,বুদ্ধদেবকে
উৎকেন্দ্রিক বলতে হবে?বুদ্ধদেব দেখাবেন,আধুনিক কবিদের যাত্রা আছে লক্ষ্য নেই,এবং
প্রতিপক্ষ অবশ্যই পথ রুধি রবীন্দ্রনাথ,তাঁর কিনা পথ আছে এবং লক্ষ্যও আছে।
বুদ্ধদেব যে
ব্যদলেয়েরকে পেয়ে,রবীন্দ্রনাথের থেকে বড় কবি পাওয়া গেল,ভেবে নিশ্চিন্ত হলেন,সেই
বুদ্ধদেবই কি রিলকের অনুবাদ করেছিলেন?যদি করেন,করজোড়ে চলে যাওয়াই
কর্তব্য,তবু,ট্রান্সেণ্ডেণ্টাল সিম্বলিস্টদের বুদ্ধদেব কীভাবে পড়লেন?এমনকী
ব্যদলেয়ের যে বিধ্বংসী আর্টের ক্ষীয়মান আবাসে (না প্রতীক নয়) চিত্রকল্প তৈরি করছেন,তা
নিয়তভঙ্গুর হলেও নিয়তলক্ষ্য।রিলকের ঈশ্বর ছিল না?ঈশ্বরের বোধ বা শয়তানের মহিমময়
সিংহাসন,যাই তিনি রচনা করুন,তাইই লক্ষ্য।র্যাঁবোর নৌকোর লক্ষ্য কোনদিকে?লক্ষ্যহীন
কে?সুধীন্দ্রনাথ?না।জীবনানন্দ?নিশ্চয় না।বিষ্ণু দে?হাসব না কাঁদব?
বিশুদ্ধ অবক্ষয়ের
নিরালম্ব কবিকে কবিতা লেখাই ছেড়ে দিতে হয়।বুদ্ধদেবের সময়ে সমর সেন তখনো ফুটে ওঠেন
নি।এবং তাঁর মৌনতা তখনো অনেক দূর।ভাষার বাচকশক্তি যতদিন তিলমাত্রও অনুভূত
হবে,ততদিন যেকোনো ভাষিক-কৃতির লক্ষ্য থাকবেই।এই সীমাবোধই তো সিম্বলিস্ট কবিদের
অর্জিত শিক্ষা।তাঁরা পারেননি বলেই তো,তাঁরা ব্যর্থ অথচ মহৎ।বুদ্ধদেব,একটি আউড়ে
যাওয়া শব্দ আউড়ে গেলেন,কিন্তু শিখতে পারলেন না।তাই অনুবাদক হিসেবেও বোধয় তিনি
ব্যদলেয়েরকে ছুঁতে পারেননি।যদিও তা অন্যরা বলেন।আমি ততটা নিশ্চিত নই।
বিপরীতে ব্যদলেয়েরের এই
স্বোদ্ভাবিত অলক্ষ্য স্বভাব লক্ষ করে,বুদ্ধদেব লিখলেন,রবীন্দ্রনাথের পথ, কবির
আজীবনের পথের মোটিফ,রুদ্ধগৃহ-পথপ্রান্তে থেকে অবঞ্চিত-সত্যের তুচ্ছতায় বিকীর্ণ হতে
হতেও নাকি লক্ষ্যমাত্রায় সীমিত।
যে কবি নিজের মৃত্যুর
গান,মহা-অজানায় শেষ করে দেন,তাঁকে কেন্দ্রিক জীবনের স্থিতধী কবি বলে ঔপনিষদিক
ব্রহ্মের লক্ষ্যে অবিচল দেখালেও বুদ্ধদেবের এই আধুনিক উৎকেন্দ্রিক লক্ষ্যহীন
কবি-প্রকল্প তখনই ভেঙে যাবে,যখনই আমরা বুদ্ধদেব-উত্তর কবিসমাজে হাংরির পাশে
গোষ্ঠীগত কৃত্তিবাসকে রাখবো,রাখবো সত্তরের অধিকাংশ কবিকে।রাখবো শঙখ ঘোষকে,রাখবো
অলোকরঞ্জনকে,রাখবো সমরেন্দ্র সেনগুপ্তকে,মণীন্দ্র গুপ্তকে।
বুদ্ধদেব
বাহ্য-কবিজীবন,অন্তর্কবিজীবনের ভেদ বুঝতেন না,তাই অহেতুক বাইনারি দিয়ে আধুনিক
কবিতার লক্ষণ চিহ্নিত করতে গিয়েছিলেন।
আসলে ব্যদলেয়ের
পেয়ে,তিনি রবি-ঋণ থেকে উদ্ধার পেলেন,ভেবেছিলেন।ভূমিকা-প্রবন্ধ গোটাটাই আমার
পাঠে,ব্যদলেয়েরের উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের উত্তরপক্ষ।
কেন বুদ্ধদেবের এই
বিভ্রম?
বুদ্ধদেব সামান্য
ব্যক্তি ছিলেন না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখন রমরমা।বুদ্ধদেব সপারিষদ উজ্জ্বল
ছাত্র।বুদ্ধদেবের ক্যাম্পাসজীবন পঠন-অভিজ্ঞতায় পূর্ণ।কবিতাপাঠক বুদ্ধদেব ইউরোপের
কবিতা পড়ছেন।বয়স তরুণ।দিব্য-এরস তাঁকে প্রণোদিত করছে নিয়ত।বুদ্ধদেব গোগ্রাসে পড়ছেন
কণ্টিনেণ্টাল।এবং বুদ্ধদেবের প্রবন্ধ অনুসরণ করলে,দেখবেন একইসঙ্গে ভারতীয় সাহিত্যও
পড়ছেন।তাঁর উচ্ছ্বসিত পাঠ - অভ্যাসের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা পূর্ণ আবিষ্ট
কবি-পাঠকের।আদর্শ রোমাণ্টিক পাঠক,তিনি।তাঁরা সাধারণত আদর্শ বিশ্লেষক নন।
এবার একটু স্মরণ
করুন,বুদ্ধদেবের কবিতা,কাব্যনাট্য,উপন্যাস।কোথায় বুদ্ধদেব লক্ষ্যহীন?বিধ্বংসী
মৃত্যুর পিশাচনৃত্যের বিচূর্ণ দর্শক হিসেবে,মাইকেলের মত কোনো নরকযাত্রার বিবরণ,যা
তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত বলে মনে হতে পারে,তাও তিনি দেননি বিশেষ।আমরা যে হ্রস্ব ডার্ক-রোমাণ্টিক কবিতা
বলে প্রস্তাব করতেও পারি,এমন কোনো পিনদ্ধ কবিতা বুদ্ধদেবের,এখুনি মনে আসে
না।উপরন্তু কীটসের মত পেগান ক্যাসেল রচনা করতে তাঁর জুড়ি নেই।ননতো তিনি নিজে
ব্যদলেয়েরের মত তীব্র প্রত্যাহরণপন্থী,বিমর্ষ,উদ্যমহীন,আনখশির মৃত্যুলীন।ননতো তিনি
রিলকে বা র্যাঁবোর মত অবিতর্কিত উৎকেন্দ্রিক জীবনের যাপক,এবং তাঁর সাহিত্যেও তো
সেই ভয়াবহ,বুকহিম করা মৃত্যুঘন নির্বেদ নেই,তবে কী হোলো বুদ্ধদেবের?
বুদ্ধদেবের
ইনস্টিংক্টিভ যৌবন,ভারতীয় এবং রাবীন্দ্রিক উত্তরাধিকারেই চেনা পথেই উৎসর্জিত
হয়ে,কামকে সঞ্চারী হিসেবেই দেখতে চেয়েছিল এবং দেখেও ছিল।এই শৃঙ্গারের সঞ্চারী
কামের বর্ণনাতেও তিনি ডিক্সন অর্থাৎ কবিভাষাতেও এই মর্বিড কবিদের অনুসরণ করতে
পারেননি।বা চানও নি।বা পছন্দ করলেও পারেন নি।আসলে তিনি নিজে আদি-দলের রোমাণ্টিক
হয়ে,আদি-দলের রোমাণ্টিকদের মতই দ্রোহপ্রবণতার ফলে,এক অসম্ভব তুলনা করে
যাচ্ছিলেন।কালোর সঙ্গে বেঁটের তুলনা,যদিও দুজনেই মানুষ।
তাঁর ঐ রোমাণ্টিক মনেরই
দ্রোহ-প্রবণতা ও অবশ্যই বিস্মিত, নবীন, সৌন্দর্যবোধ তাঁকে পররোম্যাণ্টিকদের
আত্মমগ্ন -আত্মহননেচ্ছাময়, নরকসন্ধানী ও বিচূর্ণ ব্ল্যাক-রোমাণ্টিক প্রতীকগুলির
প্রতি তাঁকে, তাঁর কবিস্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখেও,আকৃষ্টও করতে
লাগল।স্বাভাবিকভাবে,যুদ্ধদীর্ণ য়ুরোপে তখন বীভৎস,ভয় শমের দিকে যেতে চাইলে বাণীর
রূপকের উপর ভরোসা করবে কম।তৈরি হতে থাকবে ভগ্নপ্রতীক,ভগ্নছন্দ,মন্ত্রোপম কর্কশ
অথবা ভয়ংকর ধ্বনিতরঙ্গ।তৈরি হবেই ডার্ক-রোমাণ্টিক/সিম্বলিস্ট, ইমেজিস্ট রহস্যময়তা।বুদ্ধদেব
নিজে তো সেইধারার কবি নন।কিন্তু আকৃষ্ট হয়েছেন।নিতে পারেননি।অথচ যে
দ্রোহপ্রবণতা,এই ব্যদলেয়েরীয় প্রত্যাহরণের ঠিক আগের স্তরের রোমাণ্টিকদের যে
ঐতিহাসিক স্বভাব,সেখেনে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে,পরের স্তরের দিকে লুব্ধ হলেন।নিজে
এগোলেন না বলে ভাবলেন,রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই তা পারতে পারেন না।জন্ম তাঁর যবেই হোক
১৮৬১তে।কীদেখে, বুদ্ধদেব এই সিদ্ধান্ত নিলেন?মোহিনী মায়ার মত প্রতারক বলেও,তিনি
ভিক্টোরীয় সংস্কারে রবীন্দ্রনাথকে পড়ে নিয়ে ভেবে ফেললেন,রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধদেবের
নিজের কবিপরিধির মতই সীমাবদ্ধ।তুলনা করবার সময়ে রবীন্দ্রনাথের শ্বাসরোধী গানগুলির
একটিও তাঁর মনে পড়ে না।কেন?কেন না রোমাণ্টিক বলেই,তাঁর রবীন্দ্রনাথ,তাঁর নিজের
মাপে তৈরি।
তিনি ভেবেই
নিয়েছেন,বিদেশী নতুন কবিদের যে ইণ্টারপ্রিটেসানে নতুনরা নতুন,সেগুলি কদাপি
রবীন্দ্রনাথে থাকতে পারে না।অথচ এ একবারও ভাবছেন না,আধুনিক য়ুরোপ বলে যাদের তিনি
ভাবছেন,তাঁরা মানবমস্তিষ্কের ধারণক্ষমতার বহির্দেশে কোনো অলক্ষ্যে উৎসর্জিত হলেন
কিনা,সেটা বুঝবার দুটি মাত্র রাস্তা আছে,হয় এসাইলাম নয় স্পিরিচুয়ালিটি।
দুটিতেই বুদ্ধদেবের
অধিকার ছিল,শুনিনি।
No comments:
Post a Comment