দুয়োরাণীর
ছমাস।সুয়োরাণীর দুমাসের ফুটফুটে ছেলে। তবু চোখ মটমট গা গসগস। দাসীবাঁদীদের দিয়ে
দূরদূর করে দুয়োরাণীকে বাইরে তাড়ায়। তাতেও কি শান্তি! আড়ালে আঙুল মটকে ফন্দি
আঁটে। দুয়োরাণীর পেট অকালে কি করে খসানো যায়। দুয়োরাণী আকাশ দেখে পাহাড় দেখে,
ফুলবাগানে বসে থাকে। পাখির সাথে কুকুর বেড়াল বাছুরের সাথে পুকুরের মাছের সাথে কথা
কয় আর দিন গোনে।
শেষমেষ সুয়োরাণীর বদ মতলব সফল হোলো। দাসীবাঁদীদের দিয়ে দুয়োর খাবারে মিশিয়ে দিল ওষুধ। দুয়োরাণীর পেট কনকন। গা ঝনঝন ।ফুলবাগানেই প্রসব হোলো একবিত্তের মেয়ে। মাথা ভর্তি চুল টানা টানা চোখ। বাছুরে গা চেটে মল সাফ করে । পাখি ডানা মেলে ছায়া দেয় । দুয়োরাণী বাঁশের ছাল দিয়ে কোনোমতে নাড়ী কেটে নেতিয়ে পড়ে। বেহুঁশ। সুয়োরাণীর বাঁদী দুয়োরাণীকে তুলে রাজপ্রাসাদের এক কোণায় কুটিরে ফেলল। শিশুকে দেখে সুয়োরাণীর কি টিটকারি! এমা! এটা যে টিকটিকি লো! এটাযে ব্যাঙাচি লো! বাঁ হাতে বাচ্চা তুলে পুকুর পাড়ে ঘাসের উপর ফেলে এল সুয়োরাণী। রাজ্যে ঢ্যাড়া পিটতে আদেশ দিল। দুয়োরাণী একটা মরা টিকটিকি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। পুকুর পাড়ে বাছুরে কুকুরে ইতিউতি চায়। কি করে এখন? পাখিরা চক্কর কাটে। কি করে এখন? শেষে মাছেরা একটা মস্তবড় পদ্মপাতার ডাঁট কেটে পুকুর কিনারায় এনে ফেলল। পদ্মপাতায় জল টলটল।হাজার হীরের দ্যূতি। বাছুরে মেয়ে শিশু ঠেলে তুলে পদ্মপাতায় রাখল। কুকূরে পড়ে থাকা দুয়োরাণীর কবচ হার তুলে এনে শিশুর পাশে রাখল। পাখি পদ্ম পাপড়ি ছিঁড়ে শিশুর গা ঢাকল। মাছেরা পানা লতার বেড় দিয়ে নৌকো মজবুত করল। পদ্মপাতার নৌকো ভাসল। পুকুর থেকে নালা নহর বেয়ে নৌকো নদীতে ওঠে। নদী বেয়ে নদীর মোহনায়। নৌকো ভেসে যায়। পাখি উড়ে উড়ে আসে ঠোঁটে করে মধু ভরা ফুল আনে, চাটায়। একটু একটু করে বড় হয় মেয়ে। এপাশ ফেরে ওপাশ ফেরে। দিন যায়। পাতা নৌকো ভাসতে ভাসতে গভীর বনের প্রান্তে এক ঘাটে এসে থামে। এক দুখিনী কাঠকুড়ুনি সেই ঘাটে বসে কাঁদছিল। বাঁজা বলে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকদিন হল সে কাঠকুটো বেচে আর একা একা বনের ধারে কুটিরে বাস করে। মনের দুঃখে মাথা মুড় গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে দেখে একী! পায়ের কাছে কি ঠেকে? দেবশিশু? শিশু কন্যার ডাগর ডাগর চোখ। খিলখিল হাসি। পাশে রাখা কবচ হার তুলে নেয়। কোন অভাগী জনম দিয়ে ভাসিয়ে দিল গো! ও মাগো! মরে যাই। তবে কি ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন? ঝটপট কোলে নিয়ে কুটিরে। মেয়েটি কাঁদে না। শুধু হাসে আর হাসে। আলো বাতি জ্বেলে নাইয়ে মধু চাটিয়ে শুইয়ে রেখে যেই একটু দোরের বাইরে গেছে, ওমনি ওয়াঁ ওয়াঁ। কান্না শুনেই দৌড়ে আসে। দেখে। ওমা! ওকি চোখের জল! না হীরে মানিক? কোলে তুলে নিতেই মেয়ের খিলখিল হাসি। কাঠকুড়ুনি মা কুড়িয়ে রাখে অশ্রু হীরে। মেয়েকে আর কাঁদায় না। মেয়ে কাঁদেনা। মেয়ে বড় হয়। নাম রাখে পদ্ম। পদ্মকুমারী বনে জঙ্গলে ঘোরে। বনের সব পশুপাখিদের সাথে ভাব। বনে তপস্যা করে এক সন্ন্যাসী। তার কাছে পাঠ নেয়। কাঠকুড়ুনি মা তাকে কবচ হার দেখায়। এটাযে তোর জন্মদাত্রী মায়ের গো! সন্ন্যাসী বাবা বলে তোর মাকে খুঁজে বের করতে হবে। তাকে অস্ত্র শিক্ষা দেয়।
সেই রাজ্যের রাজার খুব শক্ত অসুখ। কথা বলেনা উঠে বসেনা এপাশ না ওপাশ না শুধু চোখ মেলে বোবা হয়ে তাকিয়ে থাকা। বদ্যি বলে হার মানছি। ওঝা বলে অপদেবতা। সাধু সন্নেসির কথায় সবাই রাজি। কি কথা? অশ্রু হীরে যেখান থেকে পারো খুঁজে আনো। তার ধোয়া জল খেলেই অসুখ সারবে। রাজপুত্র ঘোড়া ছোটালো। ঘোড়া ছোটে। অনেক দেশ পাহাড় পর্বত নদী পার হয়ে খুঁজে পায় না অশ্রু হীরে । থকে হেরে নিজের দেশে নদীর ধারে বটগাছের তলায় বসে ঘুমিয়ে পড়ে রাজপুত্র। সেই গাছের ডালে থাকে দুই তোতাপাখি। নিজেদের মধ্যে সুখ দুঃখের কথা। ঘুম ভাঙে রাজপুত্রের। ওদের কথা শোনে।
- রাজপুত্তুর এতো ভালো দেখে বড়ো কষ্ট হোলো, তা হ্যাঁ রে?
বলতে মানা, না বলে পারিনা, রাজপুত্তুর পাবেনা ওই হীরে?
- কুক কুক কুরর ওই রাজপুত্তুর যাক না পদ্মকুমারীর কুটিরে
কাঠকুড়ুনির কাছে যতনে রাখা আছে নিক চেয়ে অশ্রুহীরে
রাজপুত্র যায়। সঙ্গে লোক লস্কর সেনা। কুটিরের দুয়ারে ঠকঠক।খোলো কপাট।আমি রাজপুত্র। অশ্রুহীরে নিতে এসেছি। এক্ষুনি দাও নইলে দরজা ভেঙে ঢুকবো। দুয়ার খুলে পদ্মকুমারী বাইরে আসে। হাতে তলোয়ার তীর ধনুক। এমনি ওমনি পাবেনা। আমার সাথে যুদ্ধ করো। আমাকে হারাও । তবে পাবে। শুরু হোলো যুদ্ধ। পরাস্ত হোলো সেনা। বন্দি রাজপুত্র কেঁদে একসা। ওই হীরে না নিয়ে গেলে আমার বাবা মারা যাবেন। দয়া করো। পদ্মকুমারী নরম হোলো।বলল দেবো। কিন্ত একটা শর্তে। কবচ লকেট হার দেখিয়ে বলল, এই হার যার চলো তাকে উদ্ধার করে আনি। চলো ওই রাজ্যের রাজাকে বন্দি করে আনি
রাজপুত্র বলে আমি জানি কোন রাজার দেওয়া এই কবচ হার।রাজপুত্র অশ্রু হীরে নিয়ে রাজার জীবন বাঁচায়। তারপর পদ্মকুমারীকে ঘোড়ায় চাপিয়ে সৈন্য নিয়ে চলল সেই রাজ্যে। রণে হারলো রাজা। পদ্মকুমারী রাজাকে বন্দি করে কবচ হার দেখিয়ে বলে এই আমার মা। রাজা অবাক হয়ে বলে, আহা সেকি? দুয়োরাণীর হয়েছিলো যে মরা টিকটিকি! পদ্মকুমারী বলে, ওমা ওমা সেকি? মানুষ কি জন্ম দেয় মরা টিকটিকি ! রাজ সভায় হাজির হলো কাঠকুড়ুনি মা দুয়োরাণী মা। পদ্মকুমারী জড়িয়ে ধরে কাঁদল। রাজা কাঁদল মন্ত্রী কাঁদল কাঁদল সভাসদ। তারপর? তারপর আর কি? সুয়োরাণীর সাজা হল পদ্মকুমারী রাজপুত্রের বিয়ে হল।
শেষমেষ সুয়োরাণীর বদ মতলব সফল হোলো। দাসীবাঁদীদের দিয়ে দুয়োর খাবারে মিশিয়ে দিল ওষুধ। দুয়োরাণীর পেট কনকন। গা ঝনঝন ।ফুলবাগানেই প্রসব হোলো একবিত্তের মেয়ে। মাথা ভর্তি চুল টানা টানা চোখ। বাছুরে গা চেটে মল সাফ করে । পাখি ডানা মেলে ছায়া দেয় । দুয়োরাণী বাঁশের ছাল দিয়ে কোনোমতে নাড়ী কেটে নেতিয়ে পড়ে। বেহুঁশ। সুয়োরাণীর বাঁদী দুয়োরাণীকে তুলে রাজপ্রাসাদের এক কোণায় কুটিরে ফেলল। শিশুকে দেখে সুয়োরাণীর কি টিটকারি! এমা! এটা যে টিকটিকি লো! এটাযে ব্যাঙাচি লো! বাঁ হাতে বাচ্চা তুলে পুকুর পাড়ে ঘাসের উপর ফেলে এল সুয়োরাণী। রাজ্যে ঢ্যাড়া পিটতে আদেশ দিল। দুয়োরাণী একটা মরা টিকটিকি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। পুকুর পাড়ে বাছুরে কুকুরে ইতিউতি চায়। কি করে এখন? পাখিরা চক্কর কাটে। কি করে এখন? শেষে মাছেরা একটা মস্তবড় পদ্মপাতার ডাঁট কেটে পুকুর কিনারায় এনে ফেলল। পদ্মপাতায় জল টলটল।হাজার হীরের দ্যূতি। বাছুরে মেয়ে শিশু ঠেলে তুলে পদ্মপাতায় রাখল। কুকূরে পড়ে থাকা দুয়োরাণীর কবচ হার তুলে এনে শিশুর পাশে রাখল। পাখি পদ্ম পাপড়ি ছিঁড়ে শিশুর গা ঢাকল। মাছেরা পানা লতার বেড় দিয়ে নৌকো মজবুত করল। পদ্মপাতার নৌকো ভাসল। পুকুর থেকে নালা নহর বেয়ে নৌকো নদীতে ওঠে। নদী বেয়ে নদীর মোহনায়। নৌকো ভেসে যায়। পাখি উড়ে উড়ে আসে ঠোঁটে করে মধু ভরা ফুল আনে, চাটায়। একটু একটু করে বড় হয় মেয়ে। এপাশ ফেরে ওপাশ ফেরে। দিন যায়। পাতা নৌকো ভাসতে ভাসতে গভীর বনের প্রান্তে এক ঘাটে এসে থামে। এক দুখিনী কাঠকুড়ুনি সেই ঘাটে বসে কাঁদছিল। বাঁজা বলে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকদিন হল সে কাঠকুটো বেচে আর একা একা বনের ধারে কুটিরে বাস করে। মনের দুঃখে মাথা মুড় গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে দেখে একী! পায়ের কাছে কি ঠেকে? দেবশিশু? শিশু কন্যার ডাগর ডাগর চোখ। খিলখিল হাসি। পাশে রাখা কবচ হার তুলে নেয়। কোন অভাগী জনম দিয়ে ভাসিয়ে দিল গো! ও মাগো! মরে যাই। তবে কি ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন? ঝটপট কোলে নিয়ে কুটিরে। মেয়েটি কাঁদে না। শুধু হাসে আর হাসে। আলো বাতি জ্বেলে নাইয়ে মধু চাটিয়ে শুইয়ে রেখে যেই একটু দোরের বাইরে গেছে, ওমনি ওয়াঁ ওয়াঁ। কান্না শুনেই দৌড়ে আসে। দেখে। ওমা! ওকি চোখের জল! না হীরে মানিক? কোলে তুলে নিতেই মেয়ের খিলখিল হাসি। কাঠকুড়ুনি মা কুড়িয়ে রাখে অশ্রু হীরে। মেয়েকে আর কাঁদায় না। মেয়ে কাঁদেনা। মেয়ে বড় হয়। নাম রাখে পদ্ম। পদ্মকুমারী বনে জঙ্গলে ঘোরে। বনের সব পশুপাখিদের সাথে ভাব। বনে তপস্যা করে এক সন্ন্যাসী। তার কাছে পাঠ নেয়। কাঠকুড়ুনি মা তাকে কবচ হার দেখায়। এটাযে তোর জন্মদাত্রী মায়ের গো! সন্ন্যাসী বাবা বলে তোর মাকে খুঁজে বের করতে হবে। তাকে অস্ত্র শিক্ষা দেয়।
সেই রাজ্যের রাজার খুব শক্ত অসুখ। কথা বলেনা উঠে বসেনা এপাশ না ওপাশ না শুধু চোখ মেলে বোবা হয়ে তাকিয়ে থাকা। বদ্যি বলে হার মানছি। ওঝা বলে অপদেবতা। সাধু সন্নেসির কথায় সবাই রাজি। কি কথা? অশ্রু হীরে যেখান থেকে পারো খুঁজে আনো। তার ধোয়া জল খেলেই অসুখ সারবে। রাজপুত্র ঘোড়া ছোটালো। ঘোড়া ছোটে। অনেক দেশ পাহাড় পর্বত নদী পার হয়ে খুঁজে পায় না অশ্রু হীরে । থকে হেরে নিজের দেশে নদীর ধারে বটগাছের তলায় বসে ঘুমিয়ে পড়ে রাজপুত্র। সেই গাছের ডালে থাকে দুই তোতাপাখি। নিজেদের মধ্যে সুখ দুঃখের কথা। ঘুম ভাঙে রাজপুত্রের। ওদের কথা শোনে।
- রাজপুত্তুর এতো ভালো দেখে বড়ো কষ্ট হোলো, তা হ্যাঁ রে?
বলতে মানা, না বলে পারিনা, রাজপুত্তুর পাবেনা ওই হীরে?
- কুক কুক কুরর ওই রাজপুত্তুর যাক না পদ্মকুমারীর কুটিরে
কাঠকুড়ুনির কাছে যতনে রাখা আছে নিক চেয়ে অশ্রুহীরে
রাজপুত্র যায়। সঙ্গে লোক লস্কর সেনা। কুটিরের দুয়ারে ঠকঠক।খোলো কপাট।আমি রাজপুত্র। অশ্রুহীরে নিতে এসেছি। এক্ষুনি দাও নইলে দরজা ভেঙে ঢুকবো। দুয়ার খুলে পদ্মকুমারী বাইরে আসে। হাতে তলোয়ার তীর ধনুক। এমনি ওমনি পাবেনা। আমার সাথে যুদ্ধ করো। আমাকে হারাও । তবে পাবে। শুরু হোলো যুদ্ধ। পরাস্ত হোলো সেনা। বন্দি রাজপুত্র কেঁদে একসা। ওই হীরে না নিয়ে গেলে আমার বাবা মারা যাবেন। দয়া করো। পদ্মকুমারী নরম হোলো।বলল দেবো। কিন্ত একটা শর্তে। কবচ লকেট হার দেখিয়ে বলল, এই হার যার চলো তাকে উদ্ধার করে আনি। চলো ওই রাজ্যের রাজাকে বন্দি করে আনি
রাজপুত্র বলে আমি জানি কোন রাজার দেওয়া এই কবচ হার।রাজপুত্র অশ্রু হীরে নিয়ে রাজার জীবন বাঁচায়। তারপর পদ্মকুমারীকে ঘোড়ায় চাপিয়ে সৈন্য নিয়ে চলল সেই রাজ্যে। রণে হারলো রাজা। পদ্মকুমারী রাজাকে বন্দি করে কবচ হার দেখিয়ে বলে এই আমার মা। রাজা অবাক হয়ে বলে, আহা সেকি? দুয়োরাণীর হয়েছিলো যে মরা টিকটিকি! পদ্মকুমারী বলে, ওমা ওমা সেকি? মানুষ কি জন্ম দেয় মরা টিকটিকি ! রাজ সভায় হাজির হলো কাঠকুড়ুনি মা দুয়োরাণী মা। পদ্মকুমারী জড়িয়ে ধরে কাঁদল। রাজা কাঁদল মন্ত্রী কাঁদল কাঁদল সভাসদ। তারপর? তারপর আর কি? সুয়োরাণীর সাজা হল পদ্মকুমারী রাজপুত্রের বিয়ে হল।
আহা অপূর্ব । অনবদ্য লেখা । নতুন একটা রূপকথা । রূপকথার সমস্ত ঐশ্বর্য নিয়েই এসেছে সে । খুব ভালো লেখা ।
ReplyDelete